বচন কয় প্রকার ও কী কী? নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচনের পার্থক্য দেখাও
Classification-of-Proposition-Difference-between-Categorical-and-Conditional-Proposition
প্রকৃতি অনুযায়ী বচনের শ্রেণি বিভাগ :
বচনে দুটি বিষয়ের মধ্যে সম্বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সম্বন্ধের প্রকৃতি অনুসারে বচন দুই প্রকারের। যথা,
১) নিরপেক্ষ বচন,
খ) সাপেক্ষ বচন।
নিরপেক্ষ বচন :
যে বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্বন্ধ অন্য কোন শর্তের ওপর নির্ভর করে না, তাকে নিরপেক্ষ বচন বলে। যেমন,
A - সকল শিশু হয় সরল।
E - কোনো মানুষ নয় দেবতা।
এই বচন দুটির প্রথমটিতে 'শিশু' সম্বন্ধে 'সরল' কথাটা স্বীকার করা হয়েছে। এবং দ্বিতীয়টিতে 'মানুষ' সম্বন্ধে 'দেবতা' কথাটিকে অস্বীকার করা হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই দুই ক্ষেত্রেই (স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতির ) কোনো পূর্ব শর্তের ওপর নির্ভর করতে হয়নি।
এই কারণে, এই বচন দুটি নিরপেক্ষ বচন বলে।
সাপেক্ষ বচন :
যে বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্বন্ধ অন্য কোন শর্তের ওপর নির্ভর করে, তাকে সাপেক্ষ বচন বলে। যেমন,
যদি বেশি বৃষ্টি হয় তবে বন্যা হবে।
দেব একজন অভিনেতা অথবা কবি।
এই বচন দুটির প্রথমটিতে 'বন্যা' সম্বন্ধে 'বৃষ্টি হওয়া'র পূর্বশর্তের কথা স্বীকার করা হয়েছে। এবং দ্বিতীয়টিতে 'কবি' সম্বন্ধে 'অভিনেতা' হওয়ার পূর্বশর্তকে অস্বীকার করা হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই দুই ক্ষেত্রেই (স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতির ) যথা ক্রমে 'বৃষ্টি হওয়া' ও 'অভিনেতা না হওয়া' - এই পূর্ব শর্তের ওপর নির্ভর করতে হয়।
একারণে, এই বচন দুটি সাপেক্ষ বচন।
নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচনের পার্থক্য :
১) বচনের মাধ্যমে দুটি পদের মধ্যে স্বরূপ ও বিরূপ সম্বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ একটি পদ সম্বন্ধে অন্য পদটিকে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয়। নিরপেক্ষ বচনে প্রকাশিত এই স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি কোন পূর্ব শর্তের ওপর নির্ভর করে না।
উদাহরণ :
A - সকল শিশু হয় সরল।
E - কোনো মানুষ নয় দেবতা।
এখানে 'শিশু'টির 'সরল হওয়া' কিংবা 'মানুষ'টির 'দেবতা না হওয়া'র পিছনে কোনো শর্ত আরোপিত হয়নি।
কিন্তু সাপেক্ষ বচনে ঘোষিত স্বরূপ বা বিরূপ সম্বন্ধটি অর্থাৎ একটি পদের সম্বন্ধে অন্য পদের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি কোনো না কোনো পূর্ব শর্তের ওপর নির্ভর করে।
উদাহরণ :
যদি বেশি বৃষ্টি হয় তবে বন্যা হবে।
দেব একজন অভিনেতা অথবা কবি।
এখানে 'বন্যা' হওয়ার বিষয়টি 'বৃষ্টি' হওয়া এই পূর্ব শর্তের ওপর নির্ভরশীল।
২) গঠনের দিক থেকে দেখলে নিরপেক্ষ বচন সাধারণত সরল বচন। যেমন,
উদাহরণ :
I - কোনো কোনো ফুল হয় লাল।
O - কোনো কোনো মানুষ নয় সৎ।
যে বচনের অন্তর্গত কোনো অংশ পৃথকভাবে বচন বলে গণ্য হতে পারে না, তাকে সরল বচন বলে। এখানে দুটি বচনের ক্ষেত্রেই অর্থাৎ 'ফুল হয় লাল' কিংবা 'মানুষ নয় সৎ' এর কোনো অংশই পৃথিকভাবে বচন হওয়ার যোগ্য নয়।
কিন্তু সাপেক্ষ বচন একাধিক সরল বচনের সমষ্টি অর্থাৎ যৌগিক বচন। যেমন,
উদাহরণ, :
যদি মেঘ হয় তবে বৃষ্টি হবে।
হয় বই পড়বো না হয় টিভি দেখবো।
এখানে দুটি বচনের ক্ষেত্রেই বচনের যেকোনো একটি অংশ পৃথকভাবে বচন হওয়ার যোগ্য। প্রথম বচনে বৃষ্টি হবে এবং দ্বিতীয় বচনে 'বই পড়ব' কিম্বা 'টিভি দেখবো' অংশ দুটি পৃথকভাবে বচন হওয়ার যোগ্য।
৩) সব নয়, কোন কোন নিরপেক্ষ বচন যৌগিক বচন।
উদাহরণ,
রাম হয় বুদ্ধিমান ছেলে। - (নিরপেক্ষ সরল বচন)
রাম বুদ্ধিমান এবং শ্যাম পরিশ্রমী। - (নিরপেক্ষ যৌগিক বচন)
কিন্তু সব সাপেক্ষ বচনই যৌগিক বচন। যেমন,
উদাহরণ :
যদি রাম আসে তবে শ্যাম আসবে। - (সাপেক্ষ যৌগিক বচন)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন